সমুদ্র বিজ্ঞান-জাকির নায়েক

 সেখানে উভয়ের মাঝে একটি আড়াল বা অন্তরায় থাকে।ঐ অন্তরায় দু’সাগরকে বিভক্ত করে রাখে।ফলে দেখা যায়,প্রত্যেক সাগরের রয়েছে নিজস্ব তাপমাত্রা,লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব।(1.principles of oceanography, Davis,pp 92-93)সাগর বিশারদদের পক্ষে এ আয়াতের ব্যাখ্যা দানের উত্তম সুযোগ রয়েছে।সাগরের মাঝে প্রবাহমান ঢালু পানির অদৃশ্য আড়াল আছে যার দিয়ে এক সাগরের পানি অন্য সাগরে যায়।
কিন্তু যখন এক সাগরের পানি অন্য সাগরে প্রবেশ করে তখন সে পানি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে এবং অন্য সাগরের পানির বৈশিষ্ট্যের সাথে একাকার হয়ে যায়।দু’পানির ধারার মধ্যে ঐ অন্তরায় একটি অন্তবর্তীকালীন একাকারকারী জোন হিসেবে কাজ করে।
কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতেও এই বিষয়ের উল্লেখ এসেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“তিনি সে সত্তা যিনি দু’সাগরের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন।” সূরা নমল -৬১
এ অবস্থা বা অন্তরাল বিভিন্ন সাগরে দেখা যায়।জিব্রাল্টারে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলন স্থলে,কেপ পয়েন্ট,কেপ পেলিনসুলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যেখানে আটলান্টিক মহাসাগর ভারত মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে সেখানে।
কিন্তু কোরআন যেখানে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির কথা বলে,তখন তা ঐ অন্তরালের সাথে নিষেধকারী প্রতিন্ধকতার কথা উল্লেখ করে।আল্লাহ বলেন,
“তিনি সমান্তরালে দু’সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট,তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা,বিস্বাদ ;উভয়ের মাঝেখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়,একটি দুভের্দ্য আড়াল।” সূরা ফোরকান- ৫৩
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার অনুযায়ী দেখা যায়,মিষ্টি পানি যেখানে লবণাক্ত পানির সাথে গিয়ে মিশে, সে স্থানের অবস্থা ঐ স্থান থেকে ভিন্ন যেখানে দু’লবণাক্ত পানি গিয়ে মিশে।নদীর মোহনার লবণাক্ত পানি ও মিষ্টি পানি মিলিত হলে যে পার্থক্য সূচিত হয়,তার কারণ হল, সেখানে দুটো স্তরকে পৃথককারী চিহ্নিত ঘনত্বের ধারাবাহিতাবিহীন pycnocline zone রয়েছে।(oceanography, Gross, p.242,introductory ocanograpry, Thurman pp300,301) আর এই আড়াল সৃষ্টিকারী জোনে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির লবণাক্ততার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।(do)
এদৃশ্য মিসরের নীল নদ ভূমধ্যসাগরের যে মিলিত হয়েছে,সেখানে সহ আরো বহু জায়গায় দেখা যায়।কোরআনে উল্লেখিত এই বৈজ্ঞানিক বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্বেবিদ্যালয়ের প্রখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞানী ও ভূতত্ব বিদ্যার অধ্যাপক ডঃ উইলিয়াম হের বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে।
মহাসাগরের গভীরের অন্ধকারঃ
অধ্যপক দুর্গা রাও একজন প্রখ্যাত সামুদ্রিক ভূতত্ববিদ এবং জেদ্দার বাদশাহ আবদুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন।তাঁকে কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের উপর মন্তব্য করতে বলা হয়ঃ
“অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ,যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে।একের উপর এক অন্ধকার।যখন সে তার হাত বের করে,তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না।আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না,তার কোন জ্যোতি নেই।সূরা আন নূর-৪০
অধ্যপক রায় বলেন, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি মাত্র আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে মহাসাগরের গভীরের অন্ধকার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে।মানুষ বিনা সাহায্যে পানির ২০-৩০ মিটার নীচে ডুব দিতে পারেনা এবং সাগরের ২০০ মিটারের অধিক নীচের অঞ্চলে বাঁচাতেও পারেনা। এ আয়াতে সকল সাগরের কথা বলা হয়নি। কেননা, সকল সাগরের নীচে অন্ধকারের স্তর নেই। আয়াতে কেবল গভীর সাগর বা মহাসাগরের কথাই বলা হয়েছে কেননা আল্লাই উক্ত আয়াতে বলেছেন, ‘গভীর সাগরের অন্ধকার’। দু‘টো কারণে গভীর মহাসাগরের স্তরবিশিষ্ট অন্ধকার দেখতে পাওয়া যায়।
১। আলোক রশ্মির সাতটি রং রংধনুতে দেখতে পাওয়া যায়। সে রং গুলো হলো, বেগুনী, নীল , নীলাভ সবুজ হলুদ, কমলা এবং লাল।আলোক রশ্মি পানিতে পড়লে তা ভেঙ্গে যায়। পানির উপরিভাগের ১০-১৫ দশ মিটার পর্যন্ত লাল রং ধারণ করতে পারে। কোন ডুবুরী পানির ২৫ মিটার নীচে ডুব দিয়ে আহত হলে, নিজের রক্তের লাল রং দেখতে পাবেনা।কেননা লাল রং ঐ গভীরতা পর্যন্ত পৌ ছায় না। অনুরূপভাবে কমলা রং পানির ৩০-৫০ মিটার নীচ পর্যন্ত পৌঁছে, হলুদ রং ৫০-১০০ মিটার, সবুজ রং ১০০-২০০ মিটার, নীল রং ২০০ মিটার এবং বেগুনী ও নীলোভ রং ২০০ মিটার গভীর পর্যন্ত পৌঁছে। যেহেতু বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রং দেখা যায় না , ফলে মহাসাগর অন্ধকার হয়। অর্থাৎ আলোর স্তরসমূহে অন্ধকার স্থান দখল করে । পানির ১০০০ মিটার নীচে সম্পূর্ণ অন্ধকার।
২।মেঘ সূর্যরশ্মিকে ধারন করে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। ফরে মেঘের নীচে অন্ধকারের ১টি স্তর সৃষ্টি হয়।এটাই হল,অন্ধকারের ১ম স্তর।সূর্যের আলো মহাসাগরের উপরে পড়লে তা ঢেউয়ের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।তখন একে আলোকোজ্জল মনে হয়।ঢেউ আলোর প্রতিফলন ঘটায় এবং অন্ধকার সৃষ্টি করে।অপ্রতিফলিত আলোক রশ্মি মহাসাগরের গভীরে প্রবেশ করে।ফলে মহাসাগরের মধ্যে দুটো ভাগ দেখতে পাওয়া যায়।উপরের ভাগে আলো ও উষ্ণতা এবং গভীরে রয়েছে অন্ধকার।উপরের অংশটি ঢেউয়ের কারণে গভীর সমুদ্র থেকে ভিন্ন ধরনের।
আভ্যন্তরীন ঢেউয়ের মধ্যে সাগর ও মহাসাগরের গভীর পানিও শামিল আছে।কারণ,তখন উপরের পানি অপেক্ষা নীচের পানির ঘনত্ব বেশী থাকে।
আভ্যন্তরীন ঢেউয়ের নীচে অন্ধকার শুরু হয়।এমন মহাসাগরের গভীরে অবস্থানকারী মাছগুলো তখন দেখতে পায়না।তাদের আলোর একমাত্র উৎস হল,নিজেদের শরীরের আলো।
কোরআন এর যর্থাথ বর্ণনা পেশ করে বলেছেঃ“প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়,যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ।
অন্য কথার,এ সকল ঢেউয়ের উপর আরো বিভিন্ন প্রকারের ঢেউ আছে যা মহাসাগরের উপরিভাগে দেখতে পাওয়া যায়।কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছেঃ‘যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে।একের উপর এক ঘন অন্ধকার।
উল্লেখিত মেঘমালা একটার উপর আরেকটা আড়াল হিসেবে কাজ করায় এবং বিভিন্ন স্তরে রং ধারণ করায় অন্ধকারের মাত্রা বা ঘনত্ব আরো বেড়ে যায়।
অধ্যাপক দুর্গা রাও এ বলে সমাপ্তি টানেন যে,১৪০০ বছর আগে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এ অবস্থার এত বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।সুতরাং এ সকল তথ্য যে ঐশী উৎস থেকে এসেছে,তা পরিস্কার।আল্লাহ বলেনঃ
“তিনি পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে,অতঃপর তাকে রক্তগত বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন।তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।” সূরা আল ফুরকান-৫৪

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরাহ (রা.)-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী

সত্যের জয় গান

জাতির আর্তনাদ